National ID (NID) Card- জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন প্রক্রিয়া
করোনা কালীন সময়ে সারাবিশ্ব যখন থমকে আছে সেই সাথে আটকে আছে বিভিন্ন দপ্তরের কাজ। তাই সরকারী অনেক গুরুত্বপূর্ণে কার্যক্রমের মত এনআইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্র সেবাও এখন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন NID কাডের্র সকল সেবা এখন থেকে অনলাইনে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। তাই এখন আপনি চাইলেই ঘরে বসে আপনার NID কার্ড সংশোধন করতে পারবেন।
অনলাইনে NID বা জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে হলে প্রথমে আপনাকে নির্বাচন অফিসের ওয়েবসাইটে আপনার NID এর তথ্য ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে তারপর নির্ধারিত ফি (বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, ওকে ওয়ালেট, টি-পিন ইত্যাদির মাধ্যমে) জমা দিয়ে সংশোধনের আবেদন করতে হবে। চলুন এবার দেখে নেই আমরা ধাপে ধাপে কিভাবে সবগুলা কাজ সম্পন্ন করব।
অনলাইনে এনআইডি বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধনের ধাপসমূহঃ
ধাপ ১: ডকুমেন্ট
সমূহ স্ক্যান/ ছবি নেয়া
NID সংশোধনের আবেদন করার পূর্বে সংশোধনের ধরন অনুযায়ী, প্রয়োজনীয়
কাগজপত্রাদি Scan করে নিতে হবে। Computer এ Scanner করতে পারলে খুবই ভাল। যদি কম্পিউটারে
স্ক্যানার না থাকে তাহলে মোবাইলে ভাল আলোতে, সোজাসুজি ভাবে ছবি তুলে নিন। ছবিটি সুন্দরভাবে
ক্রপ করে নিন এবং প্রয়োজন হলে Brightness ও Contrast বাড়িয়ে নিন। প্রতিটি ফাইল বা
ছবির সাইজ ১ মেগাবাইটের মধ্যে হতে হবে। ডকুমেন্টের
Scanned Copy বা ছবিগুলো আপনার কম্পিউটারের কোন নির্দিষ্ট ফোল্ডার বা মোবাইলের গ্যালারিতে
রাখুন।
ধাপ ২: NID
Wallet Download এবং Install করা
এনআইডি বা ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন বা হারানো কার্ড উত্তোলনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করার পূর্বে Google Play
Store থেকে যেকোন একটি মোবাইলে NID Wallet অ্যাপসটি Install করে নিন। এটি Face
Verification করতে কাজে লাগবে।
নতুন ভোটার নিবন্ধন সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুনঃ নতুন ভোটার নিবন্ধনের জন্য যা যা করতে হবে?
ধাপ ৩: নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে
রেজিষ্ট্রেশন
এবার Computer বা মোবাইলের যেকোন ব্রাউজার থেকে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ড নাম্বার দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে প্রথমে আপনাকে এই লিংকে https://services.nidw.gov.bd/nid-pub/claim-account ক্লিক করতে হবে। লিংকে ক্লিক করলে নিচের ছবির মত দেখাবে।
ছবিতে দেখানো পেজটিতে একাউন্ট নেই, রেজিস্টার বাটনে ক্লিক করলে নিচের দেখানো পেজটি ওপেন হবে। এখানে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র/
ভোটার আইডি কার্ড/ স্মার্ট কার্ড নম্বর লিখুন। যদি নতুন
ভোটার হয়ে থাকেন তাহলে আবেদনের ফরম নম্বরটি লিখুন। ফরম নম্বর দিয়েও ভোটার আইডি বা এনআইডি কার্ড
ডাউনলোড করা যাবে। আপনার জন্মতারিখ ও ছবিতে দেখানো Captcha Code টাইপ করে সাবমিট বাটনে
ক্লিক করুন।
সাবমিট বাটনে ক্লিক করার পর নিচের ছবিতে দেখানো একটি পেজ আসবে। এখানে আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা (বিভাগ, জেলা, উপজেলা) সঠিকভাবে বাছাই করুন এবং পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুতে হবে।
উপরের সব তথ্য সঠিক থাকলে পরবর্তী ধাপে মোবাইল নম্বর চাওয়া হবে (ছবিতে দেখানো হলো)। আপনি একটি সচল মোবাইল নম্বর দিয়ে আপনার Account Verification করতে হবে। অবশ্যই মোবাইল নম্বরটি সচল এবং আপনার হাতে থাকতে হবে। এরপর একটি মোবাইল নাম্বার দিয়ে বার্তা পাঠান বাটনে ক্লিক করুন।
ফেইস ভেরিফিকেশন করুনঃ
৬ ডিজিটের কোডটি সঠিক হলে আপনার Face Verification এর জন্য একটি QR কোড দেখানো হবে। NID Wallet অ্যাপ দিয়ে কোড টি স্ক্যান করে আপনার ফেইস ভেরিফিকেশন করতে হবে।

QR কোড স্ক্যান করার পর আপনার Face Verification করার অপশন আসবে। ফেইস স্ক্যান চালু করার জন্য Start Face Scan বাটনে ক্লিক করুন। অ্যাপসে এ দেখানো ভিডিওর মত, আপনার মুখ বরাবর Selfie Camera ধরুন ও সোজাসুজি তাকান। ক্যামেরা বরাবর মুখ রাখার পর যখন ক্যামেরাতে সবুজ বর্ডার দেখাবে তখন আপনার ফেইসটি একবার ডানদিকে, আরেকবার বামদিকে ঘুরাবেন। Face Verification সম্পন্ন হলে আপনার সামনে নিচের মত একটি পেইজ আসবে।
তারপর আপনাকে একটা পাসওয়ার্ড সেট করতে বলা হবে আপনি চাইলে পাসওয়ার্ড সেট করতে পারেন বা এড়িয়েও যেতে পারেন। যদি পাসওয়ার্ড মনে রাখতে না পারেন সেক্ষেত্রে পাসওয়ার্ড না দেওয়ায় ভালো। পাসওয়ার্স না দিলেও সমস্যা হবে না। পাসওয়ার্ড দেওয়ার সুবিধা হচ্ছে ভবিষ্যতে আপনি ফেইস ভেরিফিকেশন ছাড়াই লগইন করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনে যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন
![]() |
এই ধাপে আপনার NID তে যা যা সংশোধন করতেছেন তার বিস্তারিত দেখাবে সব ঠিক থাকলে আবারো পরবর্তী বাটনে ক্লিক করবেন। তারপর আপনার প্রয়োজনীয় ফি জমা দেওয়ার জন্য দেখাবে। আবারো পরবর্তী বাটনে ক্লিক করলে স্ক্রিনে দেখাবে কত টাকা পেমেন্ট করতে হবে। যত টাকা দেখাই তত টাকা আপনি জমা দিতে হবে।
জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি সংশোধন ফি’র পরিমানঃ
ক্রমিক |
সংশোধনের ধরণ |
নির্ধারিত ফি’র পরিমান |
০১ |
এনআইডির তথ্য সংশোধন – NID Info Correction |
২৩০ টাকা |
০২ |
অন্যান্য তথ্য সংশোধন – Other Info Correction |
১১৫ টাকা |
০৩ |
উভয় তথ্য সংশোধন – Both Info Correction |
৩৪৫ টাকা |
০৪ |
রিইস্যু – Duplicate
Regular (হারানো বা স্থানান্তর পরবর্তী
নতুন কার্ড উত্তোলন)
|
সাধারন আবেদন ২৩০
টাকা |
জরুরী আবেদন ৩৪৫
টাকা |
বি.দ্রঃ উপরোক্ত ফি সমূহ শুধুমাত্র প্রথমবার আবেদনের জন্য প্রযোজ্য। পরবর্তী প্রতিবার আবেদনের জন্য ১১৫/- টাকা করে বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি সংশোধনের ফি’র পরিমান সংশ্লিষ্ট অ্যাপসে এনআইডি নম্বর এবং সংশোধনের ধরণ প্রদানের পর প্রদর্শিত হবে।
যে সকল মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি সংশোধন ফি জমা দেওয়া যাবে:
১. ডাচ্-বাংলা ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং (রকেট) এর মাধ্যমে।
২. ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড এর ওকে ওয়ালেট মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে।
৩. ট্রাষ্ট ব্যাংক লিমিটেড এর টি-ক্যাশ মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে।
৪. মিউচুয়াল ট্রাষ্ট ব্যাংক লিমিটেড।
৫. বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড।
৬. মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল ব্যাংকিং কোম্পানী বিকাশের মাধ্যমে
বি.দ্রঃ সবচেয়ে ভালো হবে বিকাশ বা রকেট এর মাধ্যমে দেওয়া, কেননা বিকাশ এবং রকেট সব সময় হাতের নাগালে পাওয়া যায়।
নতুন ভোটার নিবন্ধন সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুনঃ নতুন ভোটার নিবন্ধনের জন্য যা যা করতে হবে?
টাকা জমা দেওয়ার পর আবারো পরবর্তী বাটনে ক্লিক করবেন। পরের ধাপে আপনার প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সংযুক্ত করতে হবে। কাগজপত্র সংযুক্তি শেষে আবারো পরবর্তী বাটনে ক্লিক করবেন। এই ধাপে আপনার আবেদনের ফাইনাল একটা রিভিউ দেখাবে আপনি কি কি পরিবর্তন করতেছেন, কি কি কাগজপত্র সংযুক্ত করছেন তার সবকিছু দেখাবে। সবকিছু ঠিক থাকলে সাবমিট বাটনে ক্লিক করবেন।
সাবমিটে ক্লিক করার সাথে সাথে আপনাকে NID এর হোম পেইজে নিযে আসবে। আপনি প্রোফাইলে ক্লিক করলে দেখবেন লেখা আছে আপনার একটি আবেদন পেন্ডীং রয়েছে। এটার পাশেই ডাউনলোড অপশন থাকবে যেখানে ক্লিক করলেই আপনার সংশোধনের আবেদন কপিটা ডাউনলোড হয়ে যাবে। এটাকে আপনি সংগ্রহ করবেন। এবার আপনকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। আপনার দেওয়া নাম্বারে ১০৫ নম্বর থেকে আবেদন এপ্রোভের এসএমএস আসলে বুঝতে হবে আপনার আবেদনটি সংশোধন হয়েছে। এনআইডি বা ভোটার আইডি সংশোধন সম্পন্ন হবার পর আপনার আইডিতে লগইন করে ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করলে আপনার সংশোধিত NID কার্ডটি পেয়ে যাবেন।
উল্লেখ্য যে, যদি কোন কারনে আপনার সংশোধনের আবেদনটা পেন্ডিং থাকে তাহলে আপনি ১০৫ এ কল দিয়ে আপনার আবেদনের আপডেট তথ্য জানতে পারবেন। আবেদন করার পর আপনার সংশোধনের উপর ভিত্তি করে যদি আপনার দাখিলকৃত কাগজপত্র কর্তৃপক্ষের কাছে পর্যাপ্ত মনে না হয় তাহলে তারা আরো কিছু কাগজপত্র চাইতে পারে। তারা যা চাইবে তা আপনাকে ম্যাসেজে জানাবে। যদি কোন কাগজ সংযুক্ত করা লাগে তাহলে তা পূর্বের ন্যায় আবার নতুন করে সংযুক্ত করে আবেদন সাবমিট করতে হবে। তারপর আবারো অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী নির্দেশনার জন্য।
নতুন ভোটার নিবন্ধন সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুনঃ নতুন ভোটার নিবন্ধনের জন্য যা যা করতে হবে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন